বরগুনার তালতলী উপজেলা মৎস্য অফিসের মাঠ সহায়ক মো. আবুল কাসেম রিঙ্কু ও তাঁর বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগ শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জলিল ফকিরের বিরুদ্ধে সমুদ্রে ইলিশ মাছ শিকারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শিকার করা ইলিশ মাছ রিঙ্কুর নেতৃত্বে সরিয়ে নেওয়ার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা বিপুল পরিমাণ ইলিশ মাছ আটক করেন।
ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে।
জানা গেছে, উপজেলার সোনাকাটা গ্রামের বাসিন্দা, উপজেলা মৎস্য অফিসের মাঠ সহায়ক ও ছাত্রলীগ নেতা আবুল কাসেম রিঙ্কু এবং তাঁর বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগ শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জলিল ফকিরের দুটি ট্রলার নিষেধাজ্ঞার আগের দিন শুক্রবার রাতে ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে ইলিশ শিকারে সাগরে যায়। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ওই ট্রলার দুটি সাগরে ইলিশ শিকার করে।
জেলেদের অভিযোগ, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইনের যোগসাজশে আওয়ামী লীগ নেতা জলিল ফকির ও তাঁর ছেলে মৎস্য অফিসের মাঠ সহায়ক রিঙ্কু সাগরে ইলিশ মাছ শিকার করেছেন। রবিবার দিবাগত গভীর রাতে ইলিশ মাছ নিয়ে ওই ট্রলার দুটি ফকিরহাট ঘাটে আসে। পরে ট্রলারের লোকজন ইলিশ মাছ ড্রামে ভরে রিঙ্কুর মৎস্য আড়তে রাখেন। স্থানীয় জেলে আমির হোসেন ও রুবেল মাঠ সহায়ক রিঙ্কুর আড়তে বস্তায় ভরে রাখা মাছ আটক করেন।
এ সময় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁর সাড়া মেলেনি। পরে রাতেই আড়ত থেকে ম্যানেজার আল আমিন, জলিল ফকির ও রিঙ্কু মাছ সরিয়ে ফেলেন। খবর পেয়ে স্থানীয় জেলেরা ওই আড়তে এসে জড়ো হন। এ ছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, আবুল কাসেম রিঙ্কু উপজেলা ছাত্রলীগ সহ-সম্পাদক পদে আছেন। ২০২১ সালে সাবেক সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর প্রভাব খাটিয়ে তিনি উপজেলা মৎস্য অফিসে মাঠ সহায়ক পদে চাকরি নেন।
জেলে আমির হোসেন ও রুবেল বলেন, ট্রলারের শব্দ পেয়ে মৎস্য ঘাটে এসে দেখি উপজেলা মৎস্য অফিসের মাঠ সহায়ক, ছাত্রলীগ নেতা আবুল কাসেম রিঙ্কু ও তাঁর বাবা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ফকিরের দুটি ট্রলারে অনেক ইলিশ মাছ। ট্রলারের জেলেরা ওই মাছ বস্তা ও ড্রামে ভরে রিঙ্কুর আড়তে নেয়। তাঁরা এর প্রতিবাদ করলে অভিযুক্তরা তাঁদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ওই মাছ রাতেই তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যান।
তাঁরা আরও বলেন, রিঙ্কু ও তাঁর বাবা জলিল ফকির উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার প্রভাব খাটিয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সমুদ্রে মাছ শিকার করছেন। রক্ষক হয়েই তিনি ভক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন।
তালতলী উপজেলা মৎস্য অফিসের মাঠ সহায়ক আবুল কাসেম রিঙ্কুর আড়তের ম্যানেজার আল আমিন বলেন, “এই মাছ অনেক আগের।” তবে তাজা রক্ত মাখা মাছ আড়তে এলো কীভাবে—এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি নীরব থাকেন। তিনি আরও বলেন, রাতেই আড়ত থেকে মাছ সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
তালতলী উপজেলা মৎস্য অফিসের মাঠ সহায়ক ও ছাত্রলীগ নেতা আবুল কাসেম রিঙ্কু বলেন, “আমার বাবার ইলিশ মাছের আড়ত ব্যবসা আছে। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতেই আমাকে জড়ানো হয়েছে। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই।”
তালতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন ইলিশ শিকারের সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, “আমি নদীতে টহলে ছিলাম, তবে সোমবার সকালে শুনেছি আমার অফিসের মাঠ সহায়ক আবু কাসেম রিঙ্কু ও তাঁর বাবার দুটি ট্রলারে সাগর থেকে ইলিশ মাছ শিকার করে ঘাটে এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার অফিসের কেউ অনিয়ম করলে আমি এর দায়ভার নেব না। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. রোকনুজ্জামান খাঁন বলেন, “বিষয়টি আমি জেনেছি। তদন্তে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, “এ বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
কুশল/সাএ