সমৃদ্ধ ফল আমড়ার ইংরেজি নাম গোল্ডেন অ্যাপেল। বিভিন্ন লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, বাসে আর রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কের সর্বত্রই প্রতিনিয়ত হকারদের ডাক শোনা যায় লাগবে বরিশালের আমড়া। বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় এর ফলন বেশি বিধায় বরিশালের আমড়া বলেই পরিচিতি বেশি। বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলাসহ স্বরুপকাঠী ও নাজিরপুরে আমড়া আবাদ হয় বেশি। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে আমড়ার চাষ হয়। গত ৩০ এপ্রিল শিল্প মন্ত্রণালয় বরিশালের আমড়াকে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে।
পুষ্টিকর ফল আমড়ার চাহিদা দিন দিনই বাড়ছে। মৌসুমে বাজার ছাড়াও পথে পথে প্রচুর বিক্রি হয় এই আমড়া। এটি একটি অর্থকরী ফল হিসেবেও নিজের জায়গা করে নিয়েছে। ফলে বেড়ে গেছে আমড়ার চাষ ও উৎপাদন।
এ বছর পিরোজপুরের কাউখালীতে আমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে । বাম্পার ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় আমড়া চাষিরা খুশি। কাউখালীর মাটি ও আবহাওয়া আমড়া চাষের উপযোগী তাই এ বছর উপজেলায় আমড়ার ফলন গত বছরের চেয়ে ভালো হয়েছে।
ওই উপজেলায় আমড়ার আবাদ হয় ভালো। ভালো দাম ও চাহিদা থাকায় কাউখালীতে বাণিজ্যিকভাবে আমড়া চাষ হয়ে থাকে।এমন কোনো বাড়ি পাওয়া যাবে না যে বাড়িতে কম করে হলেও একটি আমড়া গাছ নেই। রাস্তার পাশে বাড়ির উঠোনে একটি আমড়া গাছ লাগানো যেন প্রতিটি মানুষের নেশায় পরিণত হয়েছে। বহু মানুষ পতিত জমি কেটে আইল তৈরি করে, আবার কেউ কেউ ফসলী জমিতে আমড়ার বড় বড় বাগান সৃষ্টি করেছেন। কোন কোন চাষীর বাগান থেকে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় হয়।
শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে পরিপক্ক আমড়া পাওয়া যায়। গ্রামের বেশির ভাগ এলাকায় আমড়া কেনা-বেচার বেপারি রয়েছে। তারা ফাল্গুন-চৈত্র মাসে কুড়ি দেখেই আগাম টাকা দিয়ে বাগান কিনে ফেলেন। আবার অনেক চাষি ভরা মৌসুমে নিজেরাই বাজারে আমড়া বিক্রি করেন। আষাঢ় মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত গাছ থেকে আমড়া পেড়ে বাজারে নিয়ে বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করা হয়। কাউখালী উপজেলার গারতা, বাসুরি, ,দক্ষিণ বাজার,, বেকুটিয়া, চিরাপাড়া, বেতকা, নতুন বাজারসহ বিভিন্ন বড় বাজারে রয়েছে আমড়ার আড়ৎ।
ওই সব আড়তে বেপারীদের কাছ থেকে আমড়া কিনে ঢাকা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ,খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এলাকায় চালান করা হয়। সেখানে আড়তদাররা বিভিন্ন মোকামের খুচরা বিক্রেতা ও পাইকারদের কাছে আমড়া বিক্রি করে।
উপজেলার কেউন্দিয়া গ্রামের আমড়া বাগানের মালিক অহিদুজ্জামান জানান, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেও আমড়ার ভালো দাম থেকে আমড়া চাষিরা বঞ্চিত হয়। আমড়ার আড়তদারের কাছে প্রতি মন আমড়া বিক্রি করি ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা।
কাউখালী বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন আমড়ার বেপারী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিদিন ৩০ মন থেকে ৪০ মন আমড়া ক্রয় করে বিভিন্ন মোকামের চালান দিয়ে থাকি। এরকম কাউখালীতে ৮-১০টি আড়ৎ রয়েছে।
উপজেলার পুরাতন আমড়ার বেপারী মোঃ আলো বলেন, কাউখালির আমড়া খুবই সুস্বাদু তাই এখানকার আমড়ার চাহিদা খুব বেশি। প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে ৩০০ মন আমড়ার বস্তা ভরে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন শহরে।
আড়তদাররা আরও জানান, কাউখালীতে আমড়ার আড়ৎ খুলে সেখান থেকে প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে আমড়া সংগ্রহ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। পাইকাররা ট্রাক, পিকআপে নিয়ে যায়। সেখান থেকে কাঁচা আমড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে।
কাউখালী উপজেলা কৃষি উপজেলা কর্মকর্তা কৃষিবিদ সোমা রানী দাস বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে আমড়া চাষিদের সব রকমের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। যার ফলে এ বছর ভাল ফলন পেয়েছে চাষিরা। যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেশি। অর্থকরী ফসল হওয়ায় কৃষকরা আমড়া চাষে দিন দিন আগ্রহী হচ্ছেন। প্রতি বছরই আমড়ার ফলন বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার হালদার জানান, কাউখালীতে এবছর আমড়া আবাদ হয়েছে প্রায় ৪০ সেক্টর জমিতে, সম্ভাব্য উৎপাদন প্রায় ৬০০ মেট্রিক টন।